গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম কালচারাল ব্যর্থতা হচ্ছে গ্রাফিতি মুছে দেয়া। যে গ্রাফিতিগুলো এখনও আছে তা রক্ষা করা হোক। এগুলো গণ-অভ্যুত্থানের দলিল, এটা জরুরি। এই গ্রাফিতি লেখা হয়েছিলো সংগ্রামী ছাত্রজনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে। গ্রাফিতি আন্দোলনের ভাষা। আন্দোলনের ভাষা কোন অশ্লীল, শ্লীলতা মানে না। আন্দোলনের ভাষায় সুশীলপনা বরং অশ্লীল। ফ্যাসিস্টের গদি যে বুলেটে উড়ে যায় তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে গ্রাফিতি, চিকা। এটা বুলেট! যতদিন দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি থাকবে ততদিন প্রতিবিপ্লব ও দুঃশাসনের নকশা আঁকতে চাইবে তাদের জন্য এটা একটা থ্রেড।

কিন্তু সেগুলো মুছে যা করা হচ্ছে তা ‘গ্রাফিতি’ নয়। কিছুতেই না। এগুলোকে আমি দেয়াল লিখন বা দেয়ালিকা বলতে আগ্রহী। “দেয়ালে লেখা-আঁকা সবটাই ‘গ্রাফিতি’ না। যতটুক ‘লেখা-আঁকা’কে মুছে দিয়ে ‘ভদ্র’ বানাইতে হচ্ছে, অইটুকুই ‘গ্রাফিতি’। বাকিটা ভোঁতা জিনিস। (কবি ও চিত্রশিল্পী রাজীব দত্তের প্রতিক্রিয়া। ১০,আগস্ট২০২৪)”

অ্যাস্থেটিক বিপ্লবী, বিপ্লবের জন্য ক্ষতিকর ম্রিতোষ তত্রাচ
ছবি: আপন দেবনাথ

কিন্তু সেগুলো মুছে যা করা হচ্ছে তা ‘গ্রাফিতি’ নয়। কিছুতেই না। এগুলোকে আমি দেয়াল লিখন বা দেয়ালিকা বলতে আগ্রহী। “দেয়ালে লেখা-আঁকা সবটাই ‘গ্রাফিতি’ না। যতটুক ‘লেখা-আঁকা’কে মুছে দিয়ে ‘ভদ্র’ বানাইতে হচ্ছে, অইটুকুই ‘গ্রাফিতি’। বাকিটা ভোঁতা জিনিস।
(কবি ও চিত্রশিল্পী রাজীব দত্তের প্রতিক্রিয়া। ১০,আগস্ট২০২৪)”

ফ্যাসিস্টমডারেটররা এইসব মুছে দিচ্ছে। এইসব আচরণ দ্রুত সংগ্রামের তীব্রতা ও স্বৈরাচারের বিভৎসতা, ভয়ংকর চিহ্ন ভুলিয়ে দিবে। এগুলো সংরক্ষণ না করতে পারাকে আমি কালচারাল ব্যর্থতা বলতে চাই লেখাগুলো অস্ত্র হয়ে উঠেছিলো খুনি হাসিনার বিরুদ্ধে। দেশের নানাবিধ সংকট ভুলে ছেলেমেয়েদের দেয়াল সাজাতে কে উৎসাহ ও অর্থায়ন করলো? তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, দুঃশাসন ও জুলুমের বিভৎসতা মুছে দিয়ে যে নান্দনিকতার ঢং করা হচ্ছে তা কখনই অভ্যুত্থানকে সমর্থন করছে না। শহীদের রক্ত শুকানোর আগেই কেন মোছা হলো গ্রাফিতি? কে সেই নান্দনিক শেয়াল? সে কি জানে না গ্রাফিতি আর দেয়ালিকার পার্থক্য?

অ্যাস্থেটিক বিপ্লবী, বিপ্লবের জন্য ক্ষতিকর ম্রিতোষ তত্রাচ
ছবি: আশিকুর রহমান

দেশ কি এখনও স্বৈরাচার মুক্ত? পনের বছরের দুঃশাসন, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, রাহাজানি, লুটপাট, ধর্ষণ, মৌলবাদী, বিচারহীনতা, পেশিশক্তির প্রভাব, জবাবহীনতা, গ্যাং কালচার সৃষ্টি হয়ে আছে তা কি উৎখাত করা গেছে এখনও? তো এইসব বিবিধ জরুরি কাজ রেখে, সংকট মোকাবিলা না করতে এসে তারা কেন দেয়ালে আঁকা সংগ্রামের বজ্র উচ্চারণ মুছে দিতে ব্যস্ত হলো? সন্দেহ ঘনীভুত হচ্ছে দ্রুত, যাঁরা ট্রাফিক ও পাড়া মহল্লার শৃঙ্খলা রক্ষা করতে মাঠে আছেন, বাজার মনিটরিং করছেন এবঙ বিবিধভাবে যারা নয়া বাংলাদেশ গঠনে পরোক্ষ-প্রত্যক্ষ কনট্রিবিউটর তাদের প্রত্যেককে রেডস্যালুট। কালচারাল প্রতিবিপ্লবের উত্থান রুখে দিতে হবে এখনই।

অ্যাস্থেটিক বিপ্লবী, বিপ্লবের জন্য ক্ষতিকর ম্রিতোষ তত্রাচ
ছবি: ম্রিতোষ তত্রাচ

২.

প্রতিবিপ্লব ঠ্যাকাতে গিয়ে অতিবিপ্লব ঘটলে তা আত্মঘাতী হয়ে উঠবে। বিপ্লবকে চ্যারিটি থেকে রক্ষা করতে হবে র্যাপ গান আন্দোলনকে অক্সিজেন জুগিয়েছিল। গ্রাফিতি, প্লেকার্ড, স্লোগান সরাসরি বুলেটের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদের সমস্ত শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ছিলো। সুশীল, সামাজিক গান কি কোন ভূমিকা রাখতে পেরেছে? অ্যাস্থেটিক বিপ্লবী, বিপ্লবের জন্য ক্ষতিকর। আন্দোলনের ভাষা হয় তীব্র তীর্যক। বুলেটের বিরুদ্ধে তাকে রুখে দাঁড়াতে হয়। আন্দোলন, সংগ্রাম চলমান। দেশে এখন শান্তির গান শোনার সময় বইছে না, ফলে এখন এইসব সুশীলপনা অভ্যুত্থানের সেইসব রুদ্ধশ্বাসের প্রতিচ্ছবি মুছে ফেলার অপচেষ্টা করছে বলে মনে করি। যে দেয়াল চিত্র আঁকা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে নান্দনিক কিন্তু প্রকৃতপ্রস্তাবে তা মৃত।

অ্যাস্থেটিক বিপ্লবী, বিপ্লবের জন্য ক্ষতিকর ম্রিতোষ তত্রাচ
ছবি: ম্রিতোষতত্রাচ

ফরাসি বিপ্লবে চিকার ভূমিকা, নকশালপন্থী চিকা, ৪৭সালের চিকা, ৬৯ গণ-অভ্যুত্থানের চিকা, ৭১এর চিকা, ৯০এর চিকা, কোলকাতার চিকা, পাকিস্তানের চিকা, শ্রীলঙ্কার চিকার ভূমিকা।

-১৭আগস্ট২৪